শীতের সকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা। কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় শীতল করা ঠাণ্ডা নিয়ে দেখা দেয়। এ সময় এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে মানুষের মাঝে এক অজানা অলসতা ভর করে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই যেন তখন স্বর্গীয় সুখ অনুভ‚ত হয়। কুয়াশার অন্ধকারে সূর্যদেবতার দেখা পাওয়া ভার। তাই সকালের উপস্থিতি টের পাওয়াও কষ্টকর। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা শীতকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই হয় সকলকে। নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শীতের সকালে প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে এক ভিন্ন আমেজ লক্ষ করা যায়। মানুষ, জীবজন্তু, পাখ-পাখালি শীতের বেলায় সূর্যের প্রত্যাশায় প্রহর গুনতে থাকে। শীতের সকালের প্রকৃত আনন্দ গ্রামীণ জীবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল বেশ মনোরম হয়। গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের প্রভাব বেশ চোখে পড়ে। শীতের কুয়াশা ভেদ করে নিজ নিজ গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হয় গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা। সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোদ পোহাতে শুরু করে। গ্রামের মানুষেরা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতকালে উষ্ণতা খুঁজে ফিরে। শীতের সকালে গ্রামের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত হলো পিঠা-পুলি খাওয়ার মুহূর্ত। গাছে গাছে খেজুরের রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ রস দিয়ে নানা রকম পিঠা বানানো হয়। গ্রামীণ জীবনের আবেদন ইট-কাঠ-পাথরের শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। শহরে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য কিংবা গরম চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য। লেপ জড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আরও একটু ঘুমিয়ে নিতে চায়। কিন্তু জীবিকার টানে তকে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই হয়। সর্বোপরি সকলের কাছেই শীতের সকাল হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যময়।